শেষ হলো বর্ণিল আয়োজন “১৬তম বার্ষিক আননূর—২০২৪”
শেষ হলো বর্ণিল আয়োজন “১৬তম বার্ষিক আননূর—২০২৪”
আননূর ডেস্ক: আননূর ছাত্রকাফেলা জামিয়া গহরপুরের এক মনোহরি কাফেলা। স্বপ্ন ও স্বপ্ন ছোঁয়ার শাশ্বত বিতান। গেলো ১৯ ও ২০ জানুয়ারি আননূর আয়োজন করেছিলো জাতীয় হিফজুল কুরআন ও ২দিনব্যাপী বার্ষিক প্রতিযোগিতা। শুক্র ও শনিবার, টানা দুই দিন ধরে অনুষ্ঠিত আননূর অনুষ্ঠানে নানা বিষয়কে সামনে রেখে নিজেদের প্রতিভার সুন্দরতম বিকাশ প্রদর্শন করে জামিয়ার প্রতিযোগিরা।
আকসার দেশ জেরুসালেমের প্রতি বিনম্র শোক ও সমর্থনের ছাপ, এর ওপর মিশ্র আলোকসজ্জার কিরণে জ্বলজ্বল করা স্টেজ শোভিত করেছিল প্রতিভা বিকাশের নবদিগন্তকে। সবুজ—লাল গালিচা বিছানো দৃষ্টিনন্দন প্লাটফর্মে জামিয়ার আসাতিযা ও অতিথি বিচারকদের উপস্থিতিতে একের পর এক উপস্থাপিত হতে থাকে প্রতিযোগিতার সূচিপত্র।
প্রথম দিন কালামুল্লাহ’র তেলাওয়াতের পরই শুরু হয় পবিত্রতম বাণী “হিফজুল হাদিস” প্রতিযোগিতা। বিষয়ভিত্তিক নুসূস বর্ণবর্ষণের মতো পাঠ করে প্রতিযোগিরা ঠিক চার মিনিটের মাথায় বর্ণনাকারীর নামসহ সমাপ্ত করে চল্লিশটি হাদিস। পর্বটি শেষ হতেনাহতেই মঞ্চ দখল করে নেয় ক্ষুদে তর্কবাগিশের দল। “গাইড বই; আইন করে বন্ধ করা উচিৎ” পক্ষে—বিপক্ষে শুরু হয় তুমুল বাকযুদ্ধ। কুরআন ও হাদিসের উক্তি নকল করে যে যার মতকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।
একই ধারাবাহিকতায় প্রথম ও দ্বিতীয় দিন আরও বেশকিছু পর্ব মঞ্চস্থ করে আননূর। বাংলা বক্তৃতা, আরবি বক্তৃতা, আযান, হামদ—না’ত, কবিতা আবৃত্তি, ক্ষুদে বিতর্ক, বড়দের বিতর্ক, আরবি ও বাংলা প্রবন্ধ, আরবি ও বাংলা হস্তলিপি, সবাই মিলে মান বাঁচাও, “আল আকসা; মুসলমানদের ঐতিহ্য ও চেতনা ” বিষয়ে স্কুলভিত্তিক বাংলা প্রবন্ধ, সবিশেষ জাতীয় হিফযুল কুরআন প্রতিযোগিতা। বহুমুখী প্রতিভার লড়াইয়ের পাশাপাশি একঝাঁক উদীয়মান নিউজ প্রেজেন্টারের ধারাবর্ণনা ও সংবাদ পরিবেশনের চিত্র ছিলো অন্যরকম চোখে পড়ার মতো।
আলহাজ্ব আব্দুল আজিজ মাসুক এর সৌজন্যে আননূর জাতীয় হিফজুল কুরআন অনুষ্ঠান শুরু হয় সেই সকাল থেকে। একে একে দু’টি ধাপ অতিক্রম করে গ্রান্ড ফিনালের জন্য নির্বাচিত ছয় প্রতিযোগির হৃদয়শান্ত সমান্তরাল তেলাওয়াত ছিলো আগত শ্রোতাদের আত্মার খোরাক।
ফাঁকে ফাঁকে মূল্যবান নাসিহাহ ও আলোচনা করেন বিদগ্ধ কথাসাহিত্যিক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদিন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম হাফি.। ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ ডক্টর শফি আহমদ।
আলোচনায় মাওলানা যাইনুল আবিদীন সাহেব ইতিহাসের এতোটা গভীরে চলে যান; যেখানে চিন্তার যোগমিল না হলে জাতিসত্তা ও আত্মপরিচয়ের অবশ্যম্ভাবী সঙ্কটে পড়বে মুসলিম উম্মাহ। বিশেষত ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য যে ইতিহাস নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সবক পড়াবে— যাইনুল আবিদিন সেদিকেই বারবার যাত্রা করেছেন তাঁর সমস্ত অডিয়েন্স নিয়ে।
আননূরের স্বপ্নদ্রষ্টা ও জামিয়া গহরপুরের মুহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন আহমদ গহরপুরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আননূর’র এ অনন্য আয়োজন সমাপ্ত হয় পুরস্কার বিতরণ পর্বের মধ্য দিয়ে। প্রায় শতাধিক পুরস্কারের মেলা সাজিয়ে মাওলানা সাঈদুর রহমান মুক্তাগাছা শুরু করেন পুরষ্কার বিতরণ। এসময় জামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন গহরপুরী , মাওলানা মুজিবুর রহমান সারিঘাটি, মুফতি আব্দুল্লাহ, মুফতি সালেহ আহমদ মক্কি, মুফতি ইশফাক শাফে, মুফতি মহিউস সুন্নাহ প্রমূখ বছরব্যাপী প্রস্তুতি নেয়া প্রতিযোগিদের হাতে তুলে দেন তাদের আত্মোন্নোয়নের ফসল। পরে জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মুজিবুর রহমান সারিঘাটি হাফি. এর দোয়ার মাধ্যমে জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ও ২দিনব্যাপী বার্ষিক আননূর সমাপ্ত হয়।
এখনো কোনো মন্তব্য করা হয় নি।
New comments are closed.